ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে সিমটা ভরবো ; ওটা আই এস ডি তে কম-পয়সা কাটে । বিস গ্রীকে গুড মর্নিং বলতে হবে । ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে ; ওদের ওখানে এখন রাত । সারা দিনের ক্লান্তিতে ও এখন ঘুমতে যাবে । চ্যাটে আসতে বলবো ....না থাক একটা ফোন করে নিই । আমিতো শুনে অবাক ;ওদের ওখানে গ্রীষ্মের টেমপেরাচর আমাদের এখানের থেকে অনেক বেশি । শীতের মেয়াদ ও খুবি কম । আমরা কত ভুলের পৃথিবীতে বসবাস করি । আমি ভাবতাম অ্যামেরিকা একটা শীতল তম দেশ । আমার কাছে তো দার্জিলিংয়ের শীতটা বেশ উপভোগ্য । কতবার ভেবেছি দার্জিলিংয়ে জন্ম হলে ভাল হতো । প্রকৃতির বুকে কোন ধুলো নেই , মানুষের হট্টগোল নেই .....শুধু সুখ আর সুখ । আমার সে ভুলও ভেঙে গেছিল ; অঞ্জন দত্তের গানে কাঞ্চনজঞ্জার ছেলে কাঞ্চার দারিদ্র জীবন বিত্যান্ত শুনে । আমেরিকা সম্পর্কে আমার ভুল ধারনা ছিল সেখানে গরীব কেউ নেই । সে টাও ভেঙে গেছে । আমার ক্যালিফোর্নিয়ার বান্ধবী বিস গ্রী অভিনেত্রী হবার স্বপ্ন দেখে । সে চরম দারিদ্রে নিজের বাসস্থান অবধি নেই । এই দেখেছ কত বেলা হয়ে গেল । অফিস যেতে হবে বি .এস.এন .এলের সিম লাগাতে হবে । বশের ফোন আসতে পারে । যাবার পথে লেক-টাউনের ব্রাঞ্চে একটা ফাইল ড্র-ফকরে যেতে বলেছিল । অফিসে ঢুকেই ফোন করবে ।
ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা । হাত ঘড়ির প্রয়োজনটা বোধয় আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাবে । মোবাইলেই তো সময় দেখা যায় বেশ ভাল । শুধুই কী সময় ; আর কত কিছুর ছুটি করে দেবে এই মোবাইল । যে মোবাইল যত বেশি গুনি ততো দামি । অবশ্য মধ্যবিত্তের দার্জিলিঙকেই হানিমুনে সুইজারল্যান্ড ভাবার মতো বাজারে বিকল্প চায়না সেট আছে দাম ও আয়ু কম গুন এক । মানুষও এখন মাল্টিমিডিয়া হয়ে গেছে । "একটা কাজ করলে সংসার চলবে কেমন করে " ; আমাদের অফিসের পিওন টা বলে । সকালে বাড়ি বাড়ি দুধ আর খবরের কাগজ দিয়ে আসে । কাজ থেকে বাড়ি ফেরে বাসে বাসে লজেন্স বিক্রি করতে করতে । রাতে কাছাকাছি একটা এটি-এম সেন্টারে সিকিউরিটি গার্ড । ও বলে ঝক্কি নেই ; এয়ার কন্ডিশনের মধ্যে ঘাপটি মেরে পরে থাকি কাউন্টারে রাতে বিপদ আপদ ছাড়া লোক আসেনা খুব একটা । নতুন ডোকমোর সিমটা লাগাতে হবে ভুলে গেছি ; শিখা কে একটা ফোন করতে হবে । শিখা আমার নতুন গাল-ফ্রেন্ড । কত নাম্বার হিসাব করে রাখিনি । তিস্তার এত-খাই ছিল রোজ ড্রোমিনজের ফ্রিজা চাইয়ই চাই । সব হাই-ফাই । হাবভাব দেখলে মনে হবে কোন শিল্পপতির মেয়ে । বাবা ফুট করপোশনের কেরানি মেয়ে ট্যাক্সি ছাড়া চলেনা । পাবলিক বাসে উঠলে নাকি বমি পায় । এ বমি তার বাবকে দেখে পেতো কিনা কোনদিন জিজ্ঞেস করা-হয়নি । আসলে বয়-ফ্রেন্ডের গেঁটের পয়সায় কটরিনা কায়েফ সাজাতো খুব বেশি কষ্টকর নয় একটু বাঁকা হাসি চোখ আর শরীরের কিছু কমন সুড়সুড়ি ব্যবহার করলেই চলে । রিসেন্ট আমার পকেট ওর লোড নিতে পারছিল না ; তাই সম্পর্কে ইতি টানতে এয়ার সেলের সিমটা ফেলে দিয়েছি । শিখা কে এখন পর্যন্ত ফুচকা দিয়েও ম্যানেজ করায়ায় । বেশি গড়বরে গঙ্গায় সিম বিসর্জনে লেটা চুকব । কর কত ফোন করবি কর ; আমি তখন নট রিচে-বেল ।
- " সোনা কোথায় তুমি ? .........কী মাথাটা ধরেছে জ্বর জ্বর ভাব ।......... আসতে পারবে না ! .............. প্লীজ সোনা একটা ট্যাক্সি নিয়ে রবীন্দ্র সদনে চলেএসো ভাড়াটা আমি দিয়ে দেব ।...............দেরি হবে কতক্ষণ ?........সাড়ে ছটায় বেল-কনির কোনার সিট আমি টিকিট কেটে রাখছি ...........
যেটা বললাম না সেটা ইনটার-ভেল ছাড়া তোমার প্রিয় ফ্রেঞ্চ কিস্ থাকছে ফ্রি; ছবিতে অন্ধকার সিকোয়েন্স বেশি হলে আমার হাতটাও তোমার বুকের অন্ধকারে ঘুরবে বেশিক্ষণ । "...............আতেল মার্কা ছবি তোমার ভাল লাগে না ।...........কী বলছ মেট্রোয় ডাটি পিকচার দেখবে ।.........ওকে এসো .........দেরি হবে..... ওকে আমি অপেক্ষা করবো । " মাঝের ডের ঘণ্টা কী করি ? কলেজ স্কয়ারের কোন চেয়ারে একটু গা এলিয়ে ঘুমিয়ে নিলে হয় না । মাথা টাও ঝিমঝিম করছে ।মাথার আর দোষ কী । কাল একটা অবধি একটা জাপানী থ্রি এক্স দেখেছি । শিখা পাড়েও । যা সব এক একটা পোজ দেখাচ্ছিল চক্ষু চরক গাছ ; খোকা ল্যাম্প পোস্ট ! শুধু আমিই দেখছিলাম নাকি তার ল্যাপটপের ওপারে আর কেউ ওত পেতে ছিল জানি না । থাকগে যাগ আমার কী " ফল খাও পের মাত গইনও । " আমার নীতিটা এরকম ।আমার সাথে অন লাইনে মালো-সিয়ার জেলদা , আর বাংলা দেশের রবিনাও ছিল । তবে ওরা অনেক সভ্য । জেলদা পড়ে ছিল একটা টেপ ; আর রবিনা নাইটি । শিখার কিছুই ছিলনা ।
জোরা শালিক হীন একটা ফাঁকা বেঞ্চের একপাশে ; মুখে রুমাল চাপা দিয়ে সূর্যকে রুখে দিয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার উপক্রম করতেই ; চোখটা বেশ লেগে লেগে এসেছিল । একটা ছুঁচোর ডাকে তন্দ্রা ভেঙে গেল । ছুঁচোটা আমার আসে পাশে ডাকছে । - তোর বাড়ির কেউ যদি আমাদের এখানে একসাথে দেখে-ফেলে কী করবি ? সদ্য জন্মানো বেড়াল ছানার মতো একটা মিহি সরু হয়ে আসা গলা বলল ; - আমিতো এখন ছোট নোই আমার বয়-ফ্রেন্ড থাকতেই পারে । পুরনো বইয়ের রেক ঘাটতে ঘাটতে একবার দাদার একটা ধুলো পড়া অঙ্কের খাতার ভেতর কী দেখেছিলাম জানিস ? - কী? -পণ্য স্টার দের ন্যাকেড কাট আউড । আর পেন দিয়ে তার বিশেষ বিশেষ জায়গায় কিছু মন্তব্য লেখা । যা আমি মুখেও আনতে পারবোনা কোনদিন । - কী ছিল মাইরি; বল না ? ......নেকামো করিস না ; তুইয় তোর দাদার চাইতে কমকি । - তাই না । দাঁড়া দেখাচ্ছি । কিয়ে দেখাচ্ছে বুঝতে পাড়লাম আমি । আবার সেই ছুঁচোর ডাক শুরু-হল । আমি বহুবার অনেক মেয়েকে চুমু খেয়েছি ; তখন বুঝতে পারিনি পাবলিক প্লেসে চুমুর আওয়াজ কি বিচ্ছিরি শোনায় । কি নির্লজ্জ বেহায়া মেয়েটার কথাবার্তা । আমার বোন হলে চাপগে দাঁত কটা ফেলে-দিতাম । আওয়াজটা তীর্ব হচ্ছে । আবার আমার মাথার ভেতর গোঁতা মারছে ; নীল ছবির সুন্দরিরা । আর মুখে রুমাল চাপা রাখতে পারছি না । দম যেন আটকিয়ে আসছে ।
- এ কী এ কে ? আমার দিকে কিছুক্ষণ ফেলফেল করে চেয়ে থেকে দ্রুত হেঁটে পালাচ্ছে যে মেয়েটা সে আমার খুব পরিচিত । ভাই ফোটায় আমার এই অপদার্থ ললাটে সে দধি-চিহ্ন আঁকে ; যমের দোয়ারে কাঁটা ফেলে ; ভাইয়ের শুভকামনা করে । তাকে সুরক্ষার কামনায় আমার হাত দুটো শক্তিশালী করতে প্রতি রাখিতে দামী রাখি পড়ায় আমার ডান হাতে । এখন যেটা মিসমিস করছে ওকে থাপ্পড় মারার জন্য । ও নাগালের মধ্যে নেই । আমাদের পাশের বাড়ির ছেলেটা ওর পিছনে পিছনে ছুটছে পার্ক থেকে বেড়িয়ে ফুটপাত ধরে ।
চারিদিকে শীতের গাড় অন্ধকার নেমে এসেছে সন্ধ্যে ছটা তেই । আমি একটা একটা করে জমানো সিম গুলো গঙ্গায় ফেলেছি । শিখার, বসের, বিস গ্রীর.... বটগাছের নিচের অন্ধকার বেঞ্চটায় বসতেই কারা যেন দুজন উঠে দাড়ায় । দুজনের একজন মেয়ে ।পরিষ্কার শুনতে পেলাম বলল ; -আমায় মেট্রোর কাছে ড্রপ করে-দিবি । আর একজন যে কোন পুরুষ এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । দুজন মহিলা এখানে বসার সাহস দেখাবে না । মেয়েটা কোথায় যাবে ? মেট্রো স্টেশন না মেট্রো সিনেমা । মন বলছে তুমি কিসের ইঙ্গিত খুঁজছ । শিখার ছলনার । অস্বাভাবিক কিছুই না । অন্ধকারে এ জায়গাটায় কার মুখ বোঝার উপায় থাকেনা । এই সমাজ টার মতো এক হাত দূরের মানুষ কেও চেনা কঠিন হয় । আমি অনেক মেয়ের সাথে সন্ধ্যেয় এখানে আড়াল আপডাল খুঁজেছি । আজকের ও খুঁজলাম আলোয় মাথার যন্ত্রণা করছে বলে । দূরে লাইট পোস্টের তলায় সেজে গুজে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাতের রাত পরিরা খরিদদারের আশায়। গেলাসে বোতল ঠুকে টুন টান মৃদুমন্দ আওয়াজ করছে কাছাকাছি কোন চোলাই কারবারি । যেন ডাকছে । "এসো ঔষধ খেয়ে যাও । " কটা বাজে । মোবাইল টাও নিষ্ক্রিয় পকেটে । শিখাও কি খুঁজছে আমকে ! হতে পারে আমি এখন নট রিচে-বেল !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।